কক্সবাজারে আবাসিক হোটেলে প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মেজবান আয়োজন পণ্ড করেছে পুলিশ। আয়োজনে উপস্থিত থাকা অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গাকে আটকের পাশাপাশি ১৯ জন বিদেশি নাগরিকের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, রোহিঙ্গা দুই কিশোরীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান দুই নাগরিকের বিয়ে উপলক্ষে এই মেজবানের আয়োজন ছিল। যদিও পুলিশের সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আবাসিক হোটেল সি-পার্লে এ অভিযান চালানো হয় বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ১২ জন রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান এবং সাত জন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর আব্দুল হামিদ (৩২) ও মোহাম্মদ ইলিয়াছ (২৪) মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করেন। কনে খতিজা বেগম (১৬) ও হাসিনা আক্তার (১৭) উখিয়া উপজেলা বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।
হোটেলটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বিদেশি ১৯ নাগরিক একমাস ধরে হোটেল অবস্থান করছেন। রোববার সকালে হোটেলে আসার পর দেখতে পাই রোহিঙ্গাদের নিয়ে তারা খাবারের আয়োজন করেছেন। অনুষ্ঠানটি মেজবান নাকি বিয়ে এ বিষয়ে জানি না। অনুষ্ঠানে একটি গরু ও একটি মহিষ জবাই করা হয়। তবে বিভিন্ন জনের কাছে শুনেছি, রোহিঙ্গা দুই কিশোরীর সঙ্গে বিদেশি রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত দুই নাগরিকের বিয়ে উপলক্ষে এই খাবারের আয়োজন ছিল।’ একই ধরণের তথ্য দিয়েছেন হোটেলটির পার্শ্ববর্তী দোকানি ফরিদুল ইসলাম।
তবে উখিয়া উপজেলার ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা হামিদা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকারী আব্দুল হামিদ নামের এক আত্মীয়ের বাবার বার্ষিক কুলখানি উপলক্ষে মেজবানের আয়োজন করেন। মেজবান উপলক্ষে নিমন্ত্রণ খেতে তারা হোটেলে এসেছিলেন। মেজবান খেয়ে তারা ক্যাম্পে ফিরে যেতেন। কিন্তু তার আগেই পুলিশ হোটেলে এসে তাদের আটক করেছে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, ‘বিকেলে হোটেল সি-পার্লে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া আশ্রয় শিবিরের বেশকিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা মেজবান উপলক্ষে জড়ো হওয়ার খবর পায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১০০ জন রোহিঙ্গা ও বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ১৯ বিদেশি নাগরিকের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় অনুষ্ঠান আয়োজনের নানা সামগ্রী এবং রান্না করা খাবারসহ নানা উপকরণ। অভিযানে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হোটেলটির ম্যানেজারসহ কর্মচারীরা পালিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, আটক রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুমতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের অনুষ্ঠান আয়োজন এবং বিদেশি নাগরিকদের অবস্থানের ব্যাপারে পুলিশকে জানায়নি হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত